ওয়েলেস্লি স্ট্রীটের আর পিটার লেনের মোড়ে ক্লার্কওয়েল সাহেবের স্কুল-বাড়ীটা বেশ সরগরম হইয়া উঠিয়াছে। বেলা দশটা। ছাত্রের দল ইতিমধ্যে আসিতে শুরু করিয়াছে, বড়লোকের ছেলেরা মোটরে, মধ্যবিত্ত ও গরিব গৃহস্থের বাড়ীর ছেলেরা পদব্রজে। স্কুলের পুরানো চাকর মথুরাপ্রসাদ ছেঁড়া ও মলিন খাকির চাপকান পরিয়া তৈরী, চাপকানের হাতের কাছটাতে রাঙা সুতায় একটা ফুটবলের শিল্ডের মত নকশার মধ্যে ইংরেজী 'এম' ও 'আই' অক্ষর দুইটি জড়াপট্টি খাইয়া শোভা পাইতেছে; কারণ স্কুলের নাম মডার্ন ইস্টিটিউশন, যদিও হেডমাস্টার ক্লার্কওয়েল সাহেবের ব্যক্তিগত চিঠির উপরে ছাপানো আছে "ক্লার্কওয়েল'স মডার্ন ইস্টিটিউশন", আসলে সেটা ভুল; কারণ স্কুলটি সাহেবের নিজের নয়, অনেক দিনের পুরানো স্কুল, কমিটির হাতে আছে, ক্লার্কওয়েল সাহেব আজ পনেরো বছর এখানকার বেতনভোগী হেডমাস্টার মাত্র। এই স্কুল-বাড়ীর দোতলার পিছন দিকের তিনটি ঘর হেডমাস্টারের থাকিবার জন্য নির্দিষ্ট আছে-ঘরের সামনেই ক্লাসরুম, কাজেই পর্দা ফেলা। ক্লার্কওয়েলের বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি, মাথার চুল সাদা, মোটাসোটা, সর্বদা ফিটফাট হইয়া থাকেন, টাইটা এদিক ওদিক নড়িবার জো নাই, শার্টের সামনেটা নিখুঁত ইস্ত্রি করা, চকচকে কলার, ভাল কাটছাঁটের কোট, পেন্টালুনের পা দুটিতে চমৎকার ভাঁজ, যাহাকে বলে 'নাইফ্-এজ-ক্রিজ'-ছুরির ফলার মত সরু খাঁজ। সাহেব অবিবাহিত, কেউ কেউ বলে সাহেবের স্ত্রী আছে, কিন্তু সে সাহেবের কাছে থাকে না। তবে এখানে মিস্ সিবসন্ নামে একজন তরুণী ফিরিঙ্গী মেম সাহেবের সঙ্গেই থাকে, কেউ বলে সাহেবের শালী, কেউ বলে কী রকম বোন, কেউ বলে আর কিছু-মিস্ সিবসন্ত স্কলের টীচার, নীচের ক্লাসে ইংরেজী পড়ায় ও উচ্চারণ শেখায়।
বই সম্পর্কে আরও জানতে স্ক্যান করুন
QR কোড স্ক্যান করুন
No Review Found
50% off